বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

শাহীন মাহমুদ রাসেল

গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নেমেছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কখনো কখনো বাড়ছে বৃষ্টির বেগ। কখনো মেঘাচ্ছন্ন আকাশে নেই রোদেও দেখা। বিশেষ করে নিচু ক্ষেতে পানি জমে ক্ষতির কবলে পড়েছে সবজি। আর এতেই কপাল পুড়ছে মরিচ, পটল, ঢেড়স, করলাসহ এই অঞ্চলের আগাম শীতকালীন সবজি চাষিদের। এই অবস্থা না কাটলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষীরা।

এছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রামু ও সদরের উপর বয়ে চলা বাঁকখালী নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রামু উপজেলার মনিরঝিল, কাউয়ারখোপ, ফঁতেখারকুল, মিঠাছড়ি ও সদরের খরুলিয়া এবং দরগাহসহ বাংলা বাজারের চর এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি ফসল তলিয়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষকরা। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে নতুন করে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছে ভুক্তভোগিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার মরিচ, পটল, বেগুন ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। শীতের আগাম সবজি কপি, কন্দ পিঁয়াজ, টমেটো, লাল শাকের ক্ষেতে পানি জমে আছে। আবার অপরিকল্পিত পুকুর খননের জন্য পানি নিস্কাশন না হওয়ায় অনেক ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামের সবজি চাষি শামসুল আলম, মিঠাছড়ি গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, কয়েকদিন থেকে বৃষ্টিতে মরিচ ক্ষেতসহ বিভিন্ন সবজি পটল, করলার একদিকে কাদা কাদা হযে গেছে। সবজি তুললেই ক্ষেতের আরো ক্ষতি হবে। আবার না তুললে সবজি পেকে যাবে। এছাড়া সুর্য না উঠাই অর্থাৎ রোদ না থাকায় অনেক গাছ হলুদ হতে শুরু করেছে। আবার কিছু মরিচ গাছ মরে গেছে।

মরিচ চাষি দরগাহ পাড়া গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, তিনি ১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বর্তমানে মরিচের বাজার কিছুটা ভাল। কিন্তু টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। এছাড়াও ২ বিঘা জমি শীতকালীন সবজি চাষ করে ছিলাম। সে সব জমিতে পানি জমে আছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।

কৃষকরা আরো বলেন, কয়েকদিন ধরেই মেঘাচ্ছন্ন থাকছে আকাশ। একনাগাড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছেনা। থেমে থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামছে। রোদ নেই বললেই চলে। এতে আগাম শীতকালীন সবজির চারা নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতে। প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণে নিয়ন্ত্রন নেই তাদের। কয়েকদিন আগেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠছিলো বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মূলাসহ আগাম শীতকালীন সবজির চারাগাছ। কিন্তু চলমান বৃষ্টিতে একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে ক্ষেতে। ক্ষেত স্যাঁতসেতে হওয়ায় গোড়া পড়ে মরেও যাচ্ছে চারাগাছ। বাড়তি লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে নামা কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। সদরের বিভিন্ন এলাকায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয় এমন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

রামু উপজেলার রাজারকুল গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, বাড়তি লাভের আশায় তিনি প্রতিবছরই আগাম ফুলকপি ও বাঁধা কপি চাষ করেন। ফসল তুলে হাসিমুখেই ঘরে ফেরেন তিনি। এবাবও তিনি ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছেন। কিন্তু গত কয়েকদিন বৈরী আবহাওযায় চারাগাছ নুয়ে পড়ে মারা যাচ্ছে। এবার লাভের আশা ছেড়েই দিয়েছেন তিনি।

একই এলাকার সবজি চাষি আরিফুল ইসলাম বাঁধাকপি চাষ করেছেন সাড়ে তিন বিঘা জমিতে। তার ভাষ্য, পানি জমে অধিকাংশ চারাগাছের গোড়া পড়ে গেছে। তবে যেগুলো একটু উঁচুতে ছিলো সেগুলো কোন রকমে বেঁছে আছে। এবার মোটা অংকের লোকসানে পড়তে হবে তাকে। এদিকে সবজি খেতে বৃষ্টির পানি জমায় ও গাছ মরতে শুরু করায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজির উৎপাদন কমেছে। ফলে সবজির দাম অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারাও বিপাকে পড়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, এই মুহূর্তে সমূদ্রে বিরাজ করছে নিম্নচাপ। এরই প্রভাবে কক্সবাজারসহ দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরো কয়েকদিন নাগাদ নিম্নচাপ থাকতে পারে। নিম্নচাপ কেটে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ, খ, ম শাহারিয়ার বলেন, কক্সবাজারে তেমন ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। তারপরও যে সব ক্ষেত এখনো স্যাঁতসেতে রয়েছে সেইসব ক্ষেতে চারার গোড়াপচা রোগের আক্রমন দেখা দিতে পারে। রোদ হলেই এই সংকট কেটে যাবে। সংকট থেকে গেলে সেই ক্ষেত্রে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। একই সাথে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে উঁচু জমি নির্বাচনের পরামর্শ দেন।